স্বামী বিবেকানন্দ

সকলকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি আমাদের জানা-অজানা ব্লক সাইডে আমাদের এখনকার আয়োজনে রয়েছে স্বামী বিবেকানন্দ এর সংক্ষিপ্ত বাংলা জীবনী। আর যারা এই মুহূর্তে আমাদের এই ব্লগটি পড়ছেন তাদের মধ্যে কেউ যদি চান আপনাদের কোন প্রিয় ব্যক্তিত্ব অথবা জানার আগ্রহ আছে এমন কোন ব্যক্তিকে নিয়ে আমাদের পরবর্তী ব্লগ প্রয়োজন।তারা অবশ্যই কমেন্ট করুন এবং সাবস্ক্রাইব করুন ,তাহলে সর্বপ্রথম নোটিফিকেশন আপনার কাছে পৌঁছে যাবে। চলুন শুরু করি ব্লকটি শুরু করি।

 

স্বামী বিবেকানন্দ

স্বামী বিবেকানন্দ

তথ্য :

১. স্বামী বিবেকানন্দ মানবপ্রেমের মূর্তবিগ্রহ। নিপীড়িত মানবাত্মার সেবক, আমার জীবনের আদর্শ পুরুষ

২. পিতা বিশ্বনাথ দত্ত, মা ভুবনেশ্বরী দেবী। ছেলেবেলা থেকে ধর্মভাবের উন্মেষ। মেট্রোপলিটন ইন্সটিটিউশন থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় ও স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বিএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ।

৩. সত্যের সন্ধানী নরেন ঠাকুর রামকৃষ্ণের কাছে শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।

৪. ঠাকুর রামকৃষ্ণের মহাপ্রয়াণের পরে গুরুভাইদের নিয়ে সন্ন্যাসী সংঘ গড়েন।

৫. পায়ে হেঁটে আসমুদ্রহিমাচল পরিভ্রমণ।

৬. ভারতের হিন্দুধর্ম ও বেদান্তের অদ্বৈতবাদ প্রচারের উদ্দেশ্যে আমেরিকার চিকাগো শহরে অনুষ্ঠিত ধর্মসম্মেলনে ভাষণ দান। ইংল্যান্ড ভ্রমণ। রামকৃষ্ণের ভক্ত শিষ্যদের নিয়ে ‘রামকৃষ্ণ মিশন’ ও বেলুড়মঠের প্রতিষ্ঠা।

৭. ধ্যানযোগে দেহাবসান।

৮. লেখা গ্রন্থ ও অজস্র ভাষণ নিয়ে তাঁর রচনাবলি।

৯. দেশপ্রীতি ও মানবপ্রেম তাঁকে দিয়েছিল বীরের শক্তি।

সূত্র:

(ভূমিকা—জন্ম, পিতৃপরিচয় ও শিক্ষা – ব্রাহ্মধর্মের প্রতি সাময়িক অনুরাগ ও ঠাকুর রামকৃয়ের শিষ্যত্ব গ্রহণ- ধর্মসংঘের প্রতিষ্ঠা ও ভারত ভ্রমণ—আমেরিকা ও ইংল্যান্ড গমন—রামকৃষ্ণ মিশন ও বেলুড় মঠ প্রতিষ্ঠা— মহাপ্রয়াণ – রচনাবলি ও ভাষণ—উপসংহার।)

ভূমিকা

মানবপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলার এক সন্ন্যাসী গেয়েছেন উদাত্ত কণ্ঠে

‘বহুরূপে সম্মুখে তোমার, ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর ?

জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।

এই মানবপ্রেমিক বীর সন্ন্যাসী হলেন স্বামী বিবেকানন্দ। এমন মানবপ্রেমের মূর্তবিগ্রহ যিনি, নিপীড়িত মানবাত্মার সেবা যাঁর মূলমন্ত্র, তিনি প্রশ্নাতীতভাবে আমার জীবনের আদর্শ পুরুষ।

Read More:- সবাইকে হাতের মুঠোয় আনতে পারবেন কী ভাবে

জন্ম, পিতৃপরিচয় ও শিক্ষা

 ১১ জানুয়ারি ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার সিমুলিয়ার বিখ্যাত দত্ত পরিবারে আবির্ভূত হন স্বামী

বিবেকানন্দ। সন্ন্যাস গ্রহণের পূর্বে তাঁর নাম ছিল নরেন্দ্রনাথ। তাঁর বাল্যনাম বিলে। পিতা বিশ্বনাথ দত্ত, মাতা ভুবনেশ্বরী দেবী ।, ছেলেবেলায় নরেন ছিলেন অত্যন্ত দুরন্ত প্রকৃতির। ছেলেবেলা থেকে ধর্মভাবের উন্মেষ হয় তাঁর মনে। প্রতি সন্ধ্যায় নিয়মিত বসতেন ঈশ্বরধ্যানে। অত্যন্ত তীক্ষ্ণধী ছিলেন তিনি। মেট্রোপলিটন ইন্সটিটিউশন থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন মাত্র চোদ্দো বছর বয়সে। তারপর প্রেসিডেন্সি কলেজ, সেখান থেকে জেনারেল অ্যাসেমলি কলেজে (স্কটিশ চার্চ) অধ্যয়ন করেন এবং বিএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

স্বামী বিবেকানন্দ এর ব্রাহ্মধর্মের প্রতি সাময়িক অনুরাগ ও ঠাকুর রামকৃষ্ণের শিষ্যত্ব গ্রহণ

 দর্শনশাস্ত্রের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে নরেন পাশ্চাত্য দর্শনশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন গভীর মনোযোগ ও নিষ্ঠার সঙ্গে। ফলে তাঁর মন ক্রমে সংশয়বাদী হয়ে ওঠে। ব্রাষ্মবন্ধু কেশবচন্দ্র সেনের সান্নিধ্যে আসেন নরেন। ব্রাহ্মধর্মের প্রতি তাঁর অনুরাগ জন্মে। কিন্তু ঈশ্বরের অস্তিত্ব ও বিশ্বচরাচরের নিগূঢ় সত্যবিষয়ক নানা প্রশ্ন ও জিজ্ঞাসা তাঁর মনকে করে বিচলিত। নরেন একদিন কলকাতার অদূরে দক্ষিণেশ্বরে এলেন ঠাকুর রামকৃষ্ণের কাছে। তাঁর কাছে সত্যসন্ধ নরেন পেলেন সত্যের সন্ধান। ঠাকুরের ইচ্ছায় ও নিজের অন্তর-প্রেরণায় পরমহংসের শিষ্যত্ব গ্রহণ করলেন নরেন।

স্বামী বিবেকানন্দ এর ধর্মসংঘের প্রতিষ্ঠা ও ভারত ভ্রমণ

১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে দেহ রাখলেন ঠাকুর। ঠাকুরের পবিত্র বাণী প্রচারের উদ্দেশ্যে গুরুভাইদের নিয়ে নরেন এক সন্ন্যাসী সংঘ গড়লেন বরানগরে। মানবপ্রেমের পূজারি যিনি, তাঁর প্রতিষ্ঠিত ধর্মসংঘের কাজ হল জনসেবা। নরেন বেরোলেন ভারত পরিভ্রমণে। সমগ্র ভারতের অন্তরমূর্তি ধরা দিল তাঁর চোখে। ভারতবাসীর সীমাহীন দুঃখদৈন্য দেখে তিনি হলেন ব্যথিত। উপলব্ধি করলেন সর্বাগ্রে দারিদ্র্যের অভিশাপ মোচন হওয়া দরকার। তারপর ধর্ম। ঠাকুর রামকৃষ্ণেরও ছিল একই কথা——খালি পেটে ধৰ্ম হয় না’।

স্বামী বিবেকানন্দ এর আমেরিকা ও ইংল্যান্ড গমন

আমেরিকার চিকাগো শহরে বসল ধর্মমহাসম্মেলন। বিবেকানন্দ নাম নিয়ে ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকা যাত্রা করলেন নরেন। ধর্মমহাসম্মেলনে ভারতের হিন্দুধর্ম ও বেদান্তের অদ্বৈতবাদ প্রচার করাই ছিল তাঁর মুখ্য উদ্দেশ্য। বহু বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে উদ্দেশ্য সফল করলেন তিনি। তাঁর বক্তৃতায়, তাঁর ধর্ম ব্যাখ্যায় সম্মেলনের শ্রোতৃমণ্ডলী হলেন অভিভূত। আমেরিকা থেকে এলেন ইংল্যান্ডের মাটিতে। এখানেও প্রচার করলেন বেদান্তের অদ্বৈতবাদ আর সনাতন হিন্দুধর্মের মাহাত্ম্য।

রামকৃষ্ণ মিশন ও বেলুড় মঠ প্রতিষ্ঠা

স্বামীজি কলকাতায় ফেরেন ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে। রামকৃষ্ণের ভক্ত শিষ্যদের নিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘রামকৃষ্ণ মিশন’ । হাওড়ায় বেলুড় গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন বেলুড়মঠ, যা স্বামীজির অবিস্মরণীয় কীর্তি।

মহাপ্রয়াণ

১৯০২ খ্রিস্টাব্দের ৪ জুলাই হল তাঁর মহাপ্রয়াণ। মহাপ্রয়াণের দৃশ্যটি অভূতপূর্ব। সকাল থেকে চলে ধ্যান, মায়েরা স্তবগান, অধ্যাপনা, সন্ধ্যার পর আবার ধ্যান, কিছুক্ষণের জন্য শয্যাগ্রহণ, আবার ধ্যান এবং সেই ধ্যানযোগেই দেহাবসান।

Read More:- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ে জীবনী

রচনাবলি ও ভাষণ

স্বামীজির রচিত গ্রন্থ ও বক্তৃতাবলি হল ‘রাজযোগ’, ‘ভক্তিযোগ’, ‘কর্মযোগ’, ‘প্রাচ্য-পাশ্চাত্য’ প্রভৃতি। বজ্রকণ্ঠে প্রদত্ত ভাষণে যেন আজও শোনা যায় তাঁর অমর বাণী—‘হে ভারত ভুলিও না—নীচ জাতি, মূর্খ, দরিদ্র, অজ্ঞ, মুচি, মেথর তোমার রক্ত, তোমার ভাই। হে বীর, সাহস অবলম্বন করো, সদর্পে বলো—আমি ভারতবাসী, ভারতবাসী আমার ভাই।

উপসংহার

বিবেকানন্দ সন্ন্যাসী হলেও মায়াবাদী সন্ন্যাসীদের মতো সমাজ-সংসারকে মায়াপ্রপঞ্চ মনে করতেন না । বিশ্বাস করতেন না, সর্বইন্দ্রিয়দ্বাররুদ্ধ কঠোর বৈরাগ্যের পথ ঈশ্বরসাধনার পথ। সমাজ-সংসারের লক্ষ কোটি মানুষের সেবার মধ্য দিয়ে মহানন্দময় ‘মুক্তির স্বাদ’-এর প্রত্যাশী ছিলেন তিনি। দেশপ্রীতি ও মানবপ্রেম তাঁকে দিয়েছিল বীরের শক্তি।

Leave a Comment