ধানের রোগ ও তার প্রতিকার

ধান পশ্চিমবঙ্গ তথা বাংলাদেশের প্রধান ফসল এবং প্রধান খাদ্য ও বটে । বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের ৯৫% মানুষ ভাত খেয়ে থাকে। তাই বাঙালির ধানের সঙ্গে সম্পর্ক নিবিড়। যদিও সারা বিশ্বের একর প্রতি ধান চাষ পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশী বেশি হয়ে থাকে। খরিফ ও বোরো মরশুমে ধান গাছ নানা রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়, এতে ফলন খুবই কমে যায়। ধানের রোগগুলির মধ্যে ঝলসা, খোলা ধসা ও পচা, বাদামী চিটে, ব্যাকটিরিয়াজনিত ধসা এবং টুংরো প্রভৃতি অত্যন্ত ক্ষতিকারক। আজকে আমাদের প্রতিবেদনটিতে ধানের রোগ ও তার প্রতিকার,ধানের গোড়া পচা রোগের প্রতিকার,ধানের ব্লাস্ট রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার,ধানের বিভিন্ন পোকা ও প্রতিকার,ধানের ক্ষতিকর পোকার নাম,ধানের ভাইরাস জনিত রোগ.ধানের ব্লাস্ট রোগ ও প্রতিকার,ধানের পাতা লাল হওয়ার কারণ ও প্রতিকার,ধানের পচন রোগের ঔষধ, নিয়ে আলোচনা করব।

ধানের রোগ ও তার প্রতিকার

 (ধানের রোগ ও তার প্রতিকার)

Table of Contents

ঝলসা রোগ

ঝলসা রোগ হওয়ার কারণ?

মেঘলা ও কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় যখন আপেক্ষিক আর্দ্রতা শতকরা ৯০ ভাগ, রাতের তাপমাত্রা ২৪ সে. বা তারও কম থাকে এবং ঐ সময় যদি রোগ সহনশীল জাতের ধান না থাকে তখনই এই রোগের আক্রমণ দেখা যায় এবং তাড়াতাড়ি বিস্তার লাভ করে।

ঝলসা রোগ হয়েছে কীভাবে বুঝবে?

ধানের পাতায় প্রথমে ছোট ছোট বাদামী রঙের দাগ দেখা যায়। ঐ দাগগুলি ক্রমশ বড় হয়ে চোখের মত বা মাকু আকৃতির হয়, যার মাঝখানে ধূসর রঙের এবং দাগের ধার গাঢ় বাদামি রঙের হয়। অনেকগুলো দাগ একসঙ্গে মিশে গিয়ে বড় দাগে পরিণত হয় এবং ধান গাছের পাতা লালচে বাদামি রঙ ধারণ করে, পরে পুরো পাতাটাই শুকিয়ে যায়। ফুল আসার পরে শীষের নীচের গাঁটে এই রোগের আক্রমণ হলে ঐ জায়গাটি কালো হয়ে পচে যায় এবং আক্রান্ত জায়গায় শীযটি ভেঙ্গে যায়, ফলে ধান চিটে হয়ে যায়। এছাড়া ধান গাছের গাঁটও আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত গাঁট কালো হয়ে পচে যায় এবং গাঁট ভেঙে যাওয়ায় ধান চিটে হয়ে যায়।

ঝলসা রোগ হলে কী করবে?

পাশকাঠি ছাড়া থেকে থোড় আসা পর্যন্ত ধান গাছের যদি গড়ে শতকরা ২৫ ভাগ গুছিতে উপর দিক থেকে দ্বিতীয় পাতায় এই রোগের লক্ষণ দেখা যায়, তবেই রোগ প্রতিরোধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। রোগের শুরুতে হেক্টরপ্রতি ৪০ কেজি (বিঘাপ্রতি ৫ কেজি পটাশ সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। ট্রাইসাইক্লাজল (ট্রুপার ৭৫ ডব্লিউপি) বা টেবুকোনাজল + ট্রাইফ্লক্সিস্ট্রবিন (নাটিভো৭৫ ডব্লিউপি) প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।

বাদামী দাগ রোগ বা বাদামী চিটে রোগ

বাদামী দাগ রোগ বা বাদামী চিটে রোগ হওয়ার কারণ?

বাদামী দাগ রোগ এই রোগ ধানের চারায়, পাতায় এবং দানাতে হতে পারে। সাধারণত দাগগুলি তিলের আকারের ন্যায় খুবই ছোট, দেখতে বাদামী রঙের, তবে বড় দাগগুলির মধ্য ভাগ একটু ছাই বা কমলা রঙেরও হতে পারে। রোগের আক্রমণ বেশি হলে ধান চিটে হয়ে যায়। রোগাক্রান্ত ধানের ভাত তেতো হয়।

বাদামী দাগ রোগ বা বাদামী চিটে রোগ হয়েছে কীভাবে বুঝবে?

রোয়ার পর থেকে থোড় আসা পর্যন্ত শতকরা ৫টি বা তার বেশি পাশকাঠি চিটে রোগ দ্বারা আক্রান্ত হলে প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

বাদামী দাগ রোগ বা বাদামী চিটে রোগ হলে কী করবে?

ঝলসা ও বাদামী দাগ রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতি লিটার জলে নীচের যে কোনো একটি ওষুধ গুলে স্প্রে করতে হবে।(ক) ট্রাইসাইক্লাজোল ০.৫ গ্রাম,(খ) আইসোপ্রোথিওলেন ১ মিলি,(গ) কাসুগামাইসিন ২ মিলি,(ঘ) এডিফেনফস ১ মিলি।

Read More:- সবাইকে হাতের মুঠোয় আনতে পারবেন কী ভাবে ?

খোলা পচা রোগ

খোলা পচা রোগ হয়েছে কীভাবে বুঝবে?

ধানে থোড় আসার সময় এই রোগের আক্রমণ দেখা যায়। শেষ পাতার খোলের উপর ধূসর রঙের বিভিন্ন আকৃতির দাগ দেখা যায়। দাগের চারদিকে বাদামি রঙের দাগ থাকে। রোগের আক্রমণ বেশি হলে অনেক সময় শীষ আংশিক বার হয় বা মোটেই বার হতে পারে না এবং ধান কালো ও চিটে হয়ে যায়। আগষ্ট থেকে অক্টোবরের মধ্যে শতকরা ৫ ভাগের বেশি আক্রান্ত হলে দমনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। মাজরা পোকা ও টুংরো রোগ আক্রান্ত গাছে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি হয়।

খোলা পচা রোগ হলে কী করবে?

প্রতিরোধী  জাত ও কম নাইট্রোজেন সার ব্যবহার করতে হবে। খোলা পচা রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য নীচের যে কোনো একটি ওষুধ প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে। ক) প্রোপিকোনাজোল ০.৭৫ মিলি,(খ) ট্রাইসাইক্লাজোল ০.৫ গ্রাম,(গ) ভ্যালিডামাইসিন ২ মিলি,(ঘ) কার্বেনডাজিম ১ গ্রাম,(ঙ) পেনসাইকিউরন-১.৫ মিলি।

ব্যাকটিরিয়াজনিত ধসা রোগ

ব্যাকটিরিয়াজনিত ধসা রোগ হওয়ার কারণ?

এই রোগের আক্রমণে ধান গাছের পাতা ডগার দিক থেকে কমলা রঙের হতে শুরু করে কিনারা বরাবর নীচের দিকে নামে এবং শেষ পর্যন্ত পাতাটি শুকিয়ে খড় হয়ে যায়।

ব্যাকটিরিয়াজনিত ধসা রোগ হয়েছে কীভাবে বুঝবে?

চারা অবস্থা থেকে রোয়ার পর পর্যন্ত এই রোগের দ্বারা ধান গাছ আক্রান্ত হতে পারে। আক্রান্ত ধান গাছের পাশকাঠি একদিক থেকে মেটে সবুজ রঙের হয়ে শুকিয়ে দড়ির মতো হয়ে যায় এবং পুরো গুছিটিই মরে যায়। একে ব্যাকটিরিয়াজনিত একপেশে রোগ বা ‘ক্রেসেক’ বলে।

ব্যাকটিরিয়াজনিত ধসা রোগ হলে কী করবে?

এ রোগ হলে ওষুধ প্রয়োগ তেমন কাজের হয় না। নাইট্রোজেন সার খেপে খেপে দিতে হয়। জমির অতিরিক্ত জল বার করে দিতে হবে। সিউডোমোনাস ফ্লুওরেসেন্স ব্যাকটেরিয়াল কালচার দ্বারা বীজশোধন করা দরকার।

ভূষো রোগ

ভূষো রোগ হয়েছে কীভাবে বুঝবে?

ছত্রাকে আক্রান্ত দানা ফেটে কালচে সবুজ বর্ণে পরিণত হয়।

ভূষো রোগহলে কী করবে?

শীষ আসার সময় ও তার ৮-১০ দিন পর নীচের যে কোন একটি ওষুধ জলে গুলে স্প্রে করা প্রয়োজন।(ক) কপার হাইড্রক্সাইড ২ গ্রাম,(খ) ক্লোরোথ্যালোনিল ২ গ্রাম(গ) কার্বেনডাজিম ১ গ্রাম।

টুংরো রোগ

টুংরো রোগ হওয়ার কারণ?

এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এই রোগের আক্রমণে গাছে পাশকাঠির সংখ্যা কমে যায় এবং গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, ফলে আক্রান্ত গাছ বেঁটে হয়ে যায়। পাতার রং প্রথমে হলদে ও পরে কমলা হয়ে যায়। আক্রান্ত গাছে ফুল আসতে দেরি হয় এবং শীষ খুবই ছোট হয়। শ্যামা পোকার দ্বারা এই রোগ বিস্তার লাভ করে।

টুংরো রোগ হয়েছে কীভাবে বুঝবে?

চারা থেকে কাঁচা থোড় অবস্থা পর্যন্ত যদি বিক্ষিপ্তভাবে ১০টি গুছির মধ্যে একটি গুছিতে রোগাক্রান্ত গাছ এবং শ্যামা পোকা জমিতে বা আশেপাশে দেখা যায় তবেই প্রতিকারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

টুংরো রোগ হলে কী করবে?

শ্যামা পোকা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতি লিটার জলে নীচের যে কোনো একটি ওষুধ গুলে স্প্রে করতে হবে। ক) কার্বোসালফান ২ মিলি, (খ) ইমিডাক্লোপ্রিড ০.২ মিলি, (গ) অ্যাসিফেট ০.৭৫ গ্রাম, (ঘ) ফিপ্রোনীল ১ মিলি। একর প্রতি ৩০০ লিটার ওষুধ গোলা জল প্রয়োগ করা দরকার।

Read More :- Cricket Word Cup 2023 Word Cup 2023 Schedule

ধানের কীট শত্রু নিয়ন্ত্রণ

চারা রোয়ার পর সপ্তাহে অন্তত ২ দিন ভালোভাবে ঘুরে দেখতে হবে পোকা লাগছে কিনা অথবা ক্ষতির কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে কিনা। সাধারণত আমন ধানের জমিতে মাজরা পোকা, ভেঁপু, বাদামি শোষক পোকা, শ্যামা পোকা, পাতামোড়া, পামরী পোকা, লেদা পোকা, দয়ে পোকা, চুঙ্গী পোকা ও গন্ধী পোকা প্রভৃতির আক্রমণ দেখা যায় ।

ভেঁপু পোকা

ভেঁপু পোকা হয়েছে কীভাবে বুঝবে?

দেরিতে বোনা বীজতলায় এবং মূল জমিতে ভেঁপু পোকার আক্রমণ দেখা যায়। রোয়ার ২০ দিনের মধ্যে যদি শতকরা ৫টি পেঁয়াজকলি আকারে পাতা আষাঢ় থেকে আশ্বিনের মধ্যে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) দেখা যায় ।

ভেঁপু পোকা হলে কী করবে?

তবেই নীচের যে কোনো একটি দানাদার কীটনাশক ওষুধ একর প্রতি জমিতে প্রয়োগ করে ২ ইঞ্চি জল ধরে রাখতে হবে।(ক) কার্বোফুরান ৩জি ১২ কেজি, (খ) ফোরেট ১০জি ৪ কেজি, গ) কারটাপ ৪জি ১০ কেজি,(ঘ) ফিপ্রোনীল ০.৩ জি ৭.৫ কেজি।

মাজরা পোকা

মাজরা পোকা হওয়ার কারণ?

যে সব জাতের ধানের সময়কাল ১১০ দিনের বেশি সে সব ধানে মাজরা পোকার আক্রমণ রোয়ার ৩০ দিনের মধ্যে হলে কীটনাশক ওষুধ ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। কিন্তু সময়কাল ১১০ দিনের মধ্যে হলে মাজরা পোকা নিয়ন্ত্রণের জন্য কীটনাশক ওষুধ প্রয়োগের প্রয়োজন আছে।

মাজরা পোকা হয়েছে কীভাবে বুঝবে?

আষাঢ়ের মাঝামাঝি থেকে কার্তিকের মাঝামাঝির মধ্যে (জুলাই-অক্টোবর) শতকরা অন্তত ৫টি মাঝের পাতা বা শীষ যদি শুকনো দেখা যায় এবং বন্ধু পোকা যেমন মাকড়সা, লেডী বিট্‌, লম্বা শুঁড় ঘাস ফড়িং, উরচুঙ্গা, মিরিড বাগ, ওয়াটার বাগ এবং নানা ধরনের পরজীবী বন্ধুপোকা ইত্যাদির উপস্থিতি যদি শত্রু পোকার তুলনায় খুবই কম থাকে তখনই ভেঁপু পোকা দমনের জন্য কীটনাশক ওষুধের সুপারিশ করা হয়েছে ।

মাজরা পোকা হলে কী করবে?

নীচের তালিকার যে কোনো একটি কীটনাশক ওষুধ প্রতি লিটার জলে গুলে প্রয়োগ করতে হবে। তবে থোড় অবস্থায় কোনো কীটনাশক প্রয়োগের প্রয়োজন নেই। আলোক ফাঁদ ব্যবহার করা দরকার। ক) ফসফামিডন ১.৫ মিলি,(খ) ফিপ্রোনিল ১ মিলি,(গ) ট্রায়াজোেফস ১ মিলি। দানাদার কীটনাশক হিসাবে একর প্রতি ১২ কেজি কার্বোফুরান ৩ জি বা ৪ কেজি ফোরেট ১০ জি বা ৭.৫ কেজি ফিপ্রোনিল ০.৩ জি প্রয়োগ করা যায়।

বাদামী বা সাদাপিঠ শোষক পোকা

বাদামী বা সাদাপিঠ শোষক পোকা হয়েছে কীভাবে বুঝবে?

খরিফ খন্দে বাদামী শোষক পোকা ও সাদা পিঠ শোষক পোকার আক্রমণ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই উপদ্রুত এলাকায় রোয়ার সময় প্রতি ১৫-২০ সারির পর একটি করে ফাঁক রেখে যেতে হবে। নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন করা ছাড়াও ভাদ্রের মাঝামাঝি (সেপ্টেম্বর) থেকে ঐ সব পোকার উপস্থিতি লক্ষ্য রাখতে হবে এবং দানা পুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত ক্ষেতের বিভিন্ন স্থানে অন্তত কমপক্ষে ১৫টি গুছির গোড়ার দিকে লক্ষ্য করে যদি পর পর ৩টি গুছিতে ১০টির বেশি শোষক পোকা দেখা যায় এবং ঐ সময় যদি বন্ধুপোকা যেমন মাকড়সা, লেডী বিট্ল, গ্রাউন্ড বিট্ল, ড্যামসেল ফ্লাই, ড্রাগন ফ্লাই, লম্বা শুঁড় ঘাস ফড়িং, উরচুঙ্গা, ওয়াটার বাগ, মিরিড বাগ ও অন্যান্য পরজীবী পোকা ইত্যাদির উপস্থিতি থাকে।

বাদামী বা সাদাপিঠ শোষক পোকা হলে কী করবে?

প্রয়োজনের তুলনায় কম থাকে তাহলেই নীচের যে কোনো একটি কীটনাশক প্রতি লিটার জলে গুলে ধানগাছের গোড়ায় স্প্রে করতে হবে। ক) কার্বারিল ২.৫ গ্রাম,(খ) অ্যাসিফেট ০.৭৫ গ্রাম,(গ) ডাইক্লোরভস ০.৭৫ মিলি,(ঘ) ইমিডাক্লোপ্রিড ০.২০ মিলি,(ঙ) ক্লোথায়ানিডিন ০.১ গ্রাম। সাবধানতা হিসাবে ইমিডাক্লোপ্রিড ও থায়ামেথক্সাম প্রয়োগ করা যাবে না।

পামরী পোকা

আষাঢ়ের মাঝামাঝি থেকে আশ্বিনের মাঝামাঝি (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এবং রোয়ার ৪০ দিনের মধ্যে যখন প্রতি গুছিতে একটি পূর্ণাঙ্গ কীট বা ১-২টি ক্ষতিগ্রস্ত পাতা দেখা যাবে এবং ঐ সাথে বন্ধুপোকা তুলনায় খুবই কম হবে, তখনই কীটনাশক ওষুধ স্প্রে করতে হবে। ধান গাছের ডগা ছুঁয়ে কেরোসিন ভেজানো দড়িটানা কার্যকরী।

পাতা মোড়াপোকা

প্রতি গুছিতে ১-২ টি ক্ষতিগ্রস্ত পাতা যদি আষাঢ় মাস থেকে কার্তিকের মাঝামাঝি (জুলাই-সেপ্টেম্বর) দেখা যায় এবং বন্ধুপোকার উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে কম হয়, তখনই কীটনাশক ওষুধ স্প্রে করতে হবে।

লেদা পোকা

যখন গড়ে প্রতি গুছিতে ১-২ টি সদ্য আক্রান্ত পাতা বা চোঙ্গা দেখা যাবে, তখনই নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। পামরী পোকা, পাতামোড়া পোকা, লেদা পোকা নিয়ন্ত্রণের জন্য নীচের যে কোনো একটি কীটনাশক প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে।(ক) ট্রায়াজোস ১ মিলি, (খ) মিথাইল প্যারাথিয়ন ১ মিলি, (গ) ক্লোরপাইরিফস ২.৫ মিলি, (ঘ) অ্যাজাডাইরেক্টিন (১ ইসি) ৩ মিলি,(ঙ) বিটি ০.৫-১ গ্রাম। ওষুধ প্রয়োগের ৭-১০ দিন পরেও যদি ঐ পোকার আক্রমণ থেকে যায় তাহলে দ্বিতীয়বার ঐ একই ওষুধ সুপারিশ অনুযায়ী প্রয়োগ করতে হবে।

গন্ধী পোকা

ধানের দানায় দুধ অবস্থায় গন্ধী পোকার আক্রমণ দেখা যায়। এই পোকা পূর্ণাঙ্গ ও অপূর্ণাঙ্গ দুই অবস্থায় ধানের ক্ষতি করে। যদি গড়ে প্রতি ৫টি গুছির মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ বা অপূর্ণাঙ্গ পোকা দেখা যায়, তখনই কীটনাশক ওষুধ বেলা ১১টার পর প্রয়োগ করতে হবে।

শীষকাটা লেদা পোকা

যদি প্রতি গুছিতে গড়ে ১ ইঞ্চি ১/, ইঞ্চি আকারের একটি করে শীষকাটা লেদা পোকার কীড়া দেখা যায় এবং ধান মোটামুটিভাবে পেকে যায় তখনই বিকেলের দিকে ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে। কার্বারিল সহ বিষটোপ বেশি কার্যকরী। গন্ধী পোকা ও শীষকাটা লেদা পোকা নিয়ন্ত্রণের জন্য নীচের তালিকা অনুযায়ী যে কোনো একটি কীটনাশক ওষুধ প্রতি লিটার গুলে স্প্রে করতে হবে।(ক) ফেনভেলারেট ১ মিলি,(খ) অ্যাসিফেট + ফেনভেলারেট ১.৫ মিলি,(গ) প্রোফেনোফস + সাইপারমেথ্রিন ১ মিলি,(ঘ) ইথোফেনপ্রক্স ১ মিলি। তবে ডাস্ট প্রয়োগ বেশি কার্যকরী। দয়ে পোকার আক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য বাদামীশোষক পোকা নিয়ন্ত্রণের যে কোনো একটি কীটনাশক ওষুধ স্প্রে করতে হবে।

আজকে আমারা  প্রতিবেদনটিতে ধানের রোগ ও তার প্রতিকার,ধানের গোড়া পচা রোগের প্রতিকার,ধানের ব্লাস্ট রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার,ধানের বিভিন্ন পোকা ও প্রতিকার,ধানের ক্ষতিকর পোকার নাম,ধানের ভাইরাস জনিত রোগ.ধানের ব্লাস্ট রোগ ও প্রতিকার,ধানের পাতা লাল হওয়ার কারণ ও প্রতিকার,ধানের পচন রোগের ঔষধ, নিয়ে আলোচনা করলাম ।

FAQ

Q-1. ধানের টুংরো রোগ কেন হয়?
এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এই রোগের আক্রমণে গাছে পাশকাঠির সংখ্যা কমে যায় এবং গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, ফলে আক্রান্ত গাছ বেঁটে হয়ে যায়। পাতার রং প্রথমে হলদে ও পরে কমলা হয়ে যায়। আক্রান্ত গাছে ফুল আসতে দেরি হয় এবং শীষ খুবই ছোট হয়। শ্যামা পোকার দ্বারা এই রোগ বিস্তার লাভ করে।
Q-2. টুংরো রোগের লক্ষণ কি?
চারা থেকে কাঁচা থোড় অবস্থা পর্যন্ত যদি বিক্ষিপ্তভাবে ১০টি গুছির মধ্যে একটি গুছিতে রোগাক্রান্ত গাছ এবং শ্যামা পোকা জমিতে বা আশেপাশে দেখা যায় তবেই প্রতিকারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
Q-3. ধানের বাদামী দাগ রোগের নাম কি?
বাদামী দাগ রোগ বা বাদামী চিটে রোগ

Leave a Comment